২৩শে মে, ২০২৫ ইং, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

নিয়ম না মেনেই অলিগলিতে রেস্তোরা

জামি রহমান:  রাজশাহীর হোটেল রেস্তোরাগুলোর বেশিরভাগেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। নামি দামি রেস্তোরাতেও মিলছে বাসি-পচা খাবার। নিয়ম না মানার হিড়িক চলছে সবখানেই। এসবের বিরুদ্ধে তেমন অভিযানও চলে না। তবে, যখনই কোন সংস্থা অভিযান চালায় পাওয়া যায় নানান অসঙ্গতি। নিয়মের বাধ্যবাধকতা না থাকায় গত কয়েক বছরে এখানে বেড়েছে হোটেল, চাইনিজ রেস্তোরা ও ফাস্টফুডের দোকান। অলি-গলিতে তাকালেই ব্যাঙের ছাতার মত দেখা মিলছে এসব রেস্তারার। মিলছে মুখোরচক খাবারও। কিন্তু এসব অভিজাত রেস্তোরাতে ভেজাল খাদ্য, বাসি-পচা খাবারসহ নানা অনিয়ম থাকছেই। রেস্তোরা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার মোট ৮টি লাইসেন্স থাকার কথা। কিন্তু শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স করেই অনেকেই নেমে পড়ছে এই ব্যবসায়। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেই নেই কোন ফুড প্রসেসিং এর অনুমদোন। এমনকি নেই পরিবেশের ছাড়পত্রও। এত কিছুর পরও নিশ্চুপ প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে শুধুমাত্র ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি অভিযান দেখা গেলেও এনিয়ে অন্য কারো কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, ২০১৮-২০১৯ সালে প্রিমিসেস লাইসেন্স নিয়েছিলেন ফাস্ট ফুড ১৮টি, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ৫টি, হোটেল ও রেস্তোরা ১৬৬টি। চলতি বছর জানুয়ারী পর্যন্ত প্রিমিসেস লাইসেন্স নিয়েছিলেন ফাস্ট ফুড ২১টি, চাইনিস রেস্টুরেন্ট ৬টি, হোটেল ও রেস্তোরা ৭৬টি বাঁকিগুলোকে নোটিশ পাঠাচ্ছে রাসিক। তবে, রাজশাহী রেস্টুরেন্ট ও হোটেল মালিক সমিতি বলছে, রাজশাহীতে তাদের সদস্যভূক্ত চাইনিজ ও ফাস্ট ফুড রয়েছে ১২০টি। রাজশাহী ভোক্তা অধিকার অধিদফতর গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে নগরীর ৩১টি রেস্তোরায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতেই পাওয়া গেছে ভেজাল খাদ্য বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এমনকি কোনটিতে পাওয়া গেছে ’দুদিনের বাসি খাবারও। আবার কোটনিটে পচা শশা, গাজর। খাবারে আস্তÍ তেলাপোকাও পাওয়া গেছে। এছাড়াও নোংরা পরিবেশে খাবার রান্না ও মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার সংরক্ষণের অভিযোগেও এসব নামিদামি চাইনিজ রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হয়েছে। এসব রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদেরকে জরিমানা আবার কখনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণাও করা হয়। কিন্তু এর পরেও এসব নিয়ম ভাঙ্গা কার্যক্রম চলছেই। রাজশাহী রেস্টুরেন্ট ও হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান রিংকু ও স্বিকার করে বলেন, এগুলো হচ্ছে। এগুলো আমাদের নজরে আছে। আমাদের মাসিক মিটিংএ এবিষয়ে তুলে ধরছি। পাশাপাশি এসব বিষয়ে মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে। দিনদিন এসব কমছেও। ভবিষ্যতে আরও কমে যাবে। তবে এগুলোর বিষয়ে শুধুমাত্র মালিকই দায়ী নয়। এখানে কর্মচারিরাও দায়ি থাকে। এছাড়া কিছু মালিক অধিক মুনাফার লোভেই এমন অনৈতিক পথ বেছে নিয়েছে। তবে এগুলো নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এবিষয়ে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, হোটেল চালাতে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতিপত্র লাগবে। তবে রাজশাহীর বেশিরভাগ হোটেলেই এগুলো নেই। আমাদের লোকবল সংকটের কারণে অভিযানেও নামতে পারছি না। তবে আগামীতে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এফ.এ.এম. আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, আমাদের কাছ থেকে প্রিমিসেস দেওয়া হয়। তবে অনেকেই নিচ্ছে না। এবিষয়ে আমরা নোটিশ প্রদান করেছি। আগামীতে যদি কেউ না নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমরাতো প্রদানকারি কর্মকর্তা, আমরা অভিযানে যেতে যারি না। আমরা জানাবো, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। তবে, রাসিকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার অভিযান পরিচালনা করে আসছে। আর আমরা উচ্ছেদ অভিযানে ব্যস্ত আছি। প্রিমিসেস এর বিষয়ে আমারা অভিযান করতে পারবো। আগামীতে এটি নিয়ে আমারা অভিযান করবো বলেন তিনি।

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ